২.ইসলামের মৌলিক স্তম্ভ
01.ঈমান: ইসলামের পাচটি মূল ভিত্তির মধ্যে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন হল ঈমান বা বিশ্বাস যাহা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস অধ্যায়ে তুলনামুলক আলোচনা হয়েছে। এখানেও কিছু কথা বলার অবকাশ থেকে যায়।
বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইহলোকে বার্তাবাহকদের মাধ্যমে মানবজাতীকে সর্বপ্রথম ঈমান বা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আহবান জানিয়েছেন। মহাকালের ইতিহাস থেকে জানা যায় বার্তাবাহকগন তাওহিদ রেসালাত এবং আখেরাত এই তিনটি বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। সেক্ষেত্রে সমস্ত বার্তাবাহকদের মিশন ছিল এক ও অভিন্ন কারন মহাকালের ইতিহাস থেকে এমন একজন বার্তাবাহকের সন্ধান পাওয়া যায়নি যিনি মানবগোষ্টিকে এই তিনটি বিষয়বস্তুর দিকে আহবান জানায়নি। এই তিনটি বিশ্বাসের মধ্যে আবার তাওহিদ মানব জীবনের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন কারন তাওহিদ বিশ্বাস দৃয় হলে অন্যন্য বিশ্বাস এমনিতেই হৃদয়েজগতে বদ্ধমুল হয়ে যায়। রাসুলদের মিশনে তাওহিদ বিশ্বাসকে সবচেয়ে বেশি গুরত্ব প্রদান করার কারন হল এই তাওহিদ বিশ্বাসের ফলেই মানুষ নিজেকে সকল প্রকার দাসত্ব থেকে মর্যাদার আসনে উনি্নত করে। দ্বিতীয়ত আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তাওহিদ বিশ্বাস ব্যতিরেকে মানুষের সৎকর্ম সমুহকে অর্থহীন ঘোষনা করেছেন। তৃত্বীয়ত আল্লাহ পাক যেহেতু আত্বাসমুহের স্রষ্টা তাই তার অনন্ত অসীম সত্বার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলেই মানবাত্বা সমুহ প্রকৃত স্বাধীনতা ফিরে পায়। এছাড়াও এক অনন্ত অসীম সত্বার প্রতি বিশ্বাস যে সত্বায় অবস্থান করে সেই সত্বা কখনো বস্তু জগতের কোন শক্তির নিকট নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেনা। যখনই মানব সমপ্রদায় এক অনন্ত অসীম সত্বা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ঠিক তখনই দেখা গিয়েছে মানুষ বস্তুপূজায় লিপ্ত হয়েছে আত্বার প্রশান্তি বা সাহায্য প্রাপ্তীর জন্য। বস্তুত এক অনন্ত অসীম সত্বার প্রতি বিশ্বাস মানুষের নৈতিক দৃষ্টিকে যেমন করেছে প্রসারিত ঠিক তেমনিভাবে অন্তরজগতকেও করেছে পরিশুদ্ধ। অনুভূতির জগতে যখন এক পরাক্রশশালী মহান সত্বার প্রতি বিশ্বাসের উপস্থিতি জাগ্রত থাকে মানুষের চেতণার জগৎ তখন সর্বদা এই ভয়ে ভিত থাকে যে, তিনি অন্তরের সবকিছুই জানেন এবং শুনেন এবং এই চিন্তা চেতণা থেকেই মানুষের চারিত্রিক ও নৈতিক গুনাবলী বিকষিত হতে থাকে। কুশ্চিত চিন্তা পরিহার করে মানুষ তখন সুন্দর চিন্তা করতে শিখে। প্রচেষ্টা ও সাধনার একটি পর্যায়ে এসে মানবাত্বা তার আধ্বাতি্বক সত্বার সন্ধান পায় তখন সেই মানুষটি হয় জগতের সবচেয়ে ধনী ! আধ্বাতি্বক উন্নতির উচ্চতম আসনে অধিষ্টিত হয়ে তখন ধরনীকে দেখতে পায় সে অন্ধকারাচ্ছন্ন ! মানুষের ধর্মহীনতা পতাক্ষ করে তার হৃদয়মন কেদে উঠে তখন সেই মানুষটি তার চতুর্পাশের মৃত আত্বা সমুহের চিকিৎসা ও তাদের নৈতিক সংস্কারের প্রতি মনযোগী হয় ! যে ইমান মানুষের আত্বাকে এই পর্যায়ে উনি্নত করতে পারেনি সেই সত্বার পক্ষে স্রষ্টার প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব কেমন করে পালন করা সম্ভব।
বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইহলোকে বার্তাবাহকদের মাধ্যমে মানবজাতীকে সর্বপ্রথম ঈমান বা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আহবান জানিয়েছেন। মহাকালের ইতিহাস থেকে জানা যায় বার্তাবাহকগন তাওহিদ রেসালাত এবং আখেরাত এই তিনটি বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। সেক্ষেত্রে সমস্ত বার্তাবাহকদের মিশন ছিল এক ও অভিন্ন কারন মহাকালের ইতিহাস থেকে এমন একজন বার্তাবাহকের সন্ধান পাওয়া যায়নি যিনি মানবগোষ্টিকে এই তিনটি বিষয়বস্তুর দিকে আহবান জানায়নি। এই তিনটি বিশ্বাসের মধ্যে আবার তাওহিদ মানব জীবনের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন কারন তাওহিদ বিশ্বাস দৃয় হলে অন্যন্য বিশ্বাস এমনিতেই হৃদয়েজগতে বদ্ধমুল হয়ে যায়। রাসুলদের মিশনে তাওহিদ বিশ্বাসকে সবচেয়ে বেশি গুরত্ব প্রদান করার কারন হল এই তাওহিদ বিশ্বাসের ফলেই মানুষ নিজেকে সকল প্রকার দাসত্ব থেকে মর্যাদার আসনে উনি্নত করে। দ্বিতীয়ত আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তাওহিদ বিশ্বাস ব্যতিরেকে মানুষের সৎকর্ম সমুহকে অর্থহীন ঘোষনা করেছেন। তৃত্বীয়ত আল্লাহ পাক যেহেতু আত্বাসমুহের স্রষ্টা তাই তার অনন্ত অসীম সত্বার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলেই মানবাত্বা সমুহ প্রকৃত স্বাধীনতা ফিরে পায়। এছাড়াও এক অনন্ত অসীম সত্বার প্রতি বিশ্বাস যে সত্বায় অবস্থান করে সেই সত্বা কখনো বস্তু জগতের কোন শক্তির নিকট নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেনা। যখনই মানব সমপ্রদায় এক অনন্ত অসীম সত্বা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ঠিক তখনই দেখা গিয়েছে মানুষ বস্তুপূজায় লিপ্ত হয়েছে আত্বার প্রশান্তি বা সাহায্য প্রাপ্তীর জন্য। বস্তুত এক অনন্ত অসীম সত্বার প্রতি বিশ্বাস মানুষের নৈতিক দৃষ্টিকে যেমন করেছে প্রসারিত ঠিক তেমনিভাবে অন্তরজগতকেও করেছে পরিশুদ্ধ। অনুভূতির জগতে যখন এক পরাক্রশশালী মহান সত্বার প্রতি বিশ্বাসের উপস্থিতি জাগ্রত থাকে মানুষের চেতণার জগৎ তখন সর্বদা এই ভয়ে ভিত থাকে যে, তিনি অন্তরের সবকিছুই জানেন এবং শুনেন এবং এই চিন্তা চেতণা থেকেই মানুষের চারিত্রিক ও নৈতিক গুনাবলী বিকষিত হতে থাকে। কুশ্চিত চিন্তা পরিহার করে মানুষ তখন সুন্দর চিন্তা করতে শিখে। প্রচেষ্টা ও সাধনার একটি পর্যায়ে এসে মানবাত্বা তার আধ্বাতি্বক সত্বার সন্ধান পায় তখন সেই মানুষটি হয় জগতের সবচেয়ে ধনী ! আধ্বাতি্বক উন্নতির উচ্চতম আসনে অধিষ্টিত হয়ে তখন ধরনীকে দেখতে পায় সে অন্ধকারাচ্ছন্ন ! মানুষের ধর্মহীনতা পতাক্ষ করে তার হৃদয়মন কেদে উঠে তখন সেই মানুষটি তার চতুর্পাশের মৃত আত্বা সমুহের চিকিৎসা ও তাদের নৈতিক সংস্কারের প্রতি মনযোগী হয় ! যে ইমান মানুষের আত্বাকে এই পর্যায়ে উনি্নত করতে পারেনি সেই সত্বার পক্ষে স্রষ্টার প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব কেমন করে পালন করা সম্ভব।
02.নামাজ: সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর যুক্তি সংগত কারনেই তার প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি এসে উপস্থিত হয় কারন পরাক্রশীলতার ভয়ে ভিত হয়ে যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা হয়েছে তার যদি আনুগত্যে না করা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই এই বিশ্বাসে কৃত্তিমতা বা লৌকিকতা ছিল বলে প্রমানিত হয়। বস্তুত শুধুমাত্র মৌখিক স্বীকৃতি ইসলামী জীবন দর্শনে গ্রহনযোগ্য নয় যদি তাই হত তাহলে বার্তাবাহকদের উপর কোন কিতাব অবতির্ণ করার প্রয়োজন ছিলনা। কারন তাওহীদ, রিসালাত, আখেরাত, ফেরেস্তা, জান্নাত, জাহান্নাম প্রভৃতি বিষয়বস্তুর উপর মানুষকে শুধুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করানোর জন্য কখনো কিতাব অবতির্ন করার প্রয়োজন নেই। সমাজের সবচেয়ে বোকা বা নির্বোধ লোককেও এই কয়েকটি বিষয়ের উপর ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করানো কয়েকটি কথামালার সমষ্টির মাধ্যমেই সম্ভবপর ছিল কিন্তু সেটা না করে রাসুলদের উপর কিতাবের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতীর প্রতি যুগে যুগে তার শত শত আদেশ ও নিষেধ অবর্তিন করেছেন যেন মানুষ ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনে এই হেদায়েতের অনুসরণ করে। হেদায়েতের এই আলো অন্তরজগতে প্রজ্জলিত করার লক্ষ্যেই বিশ্বাস স্থাপন করার পর বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিম জাতীর উপর নামাজ কিংবা সালাত আদায় অপরিহার্য করেছেন। এই সালাত সকল বার্তাবাহকের উম্মতের উপর ফরজ ছিল। কাহারো উপর এক ওয়াক্ত আবার কাহারো উপর দুই ওয়াক্ত। কিন্তু ইসলামের শেষনবী যেহেতু সর্বশ্রেষ্ট তাই তার ও তার অনুসারীদের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রতিদিন পাচ বার নির্ধারন করা হয়েছে। এই সালাত তারাই আদায় করতে পারে আল্লাহতে যার পূর্ন ঈমান বিদ্যমান। ঈমানশুন্য হৃদয় কখনো এই সালাত আদায় করতে পারেনা। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে ''নিঃসন্দেহে নামাজ বড়ই কঠিন কাজ, কিন্তু সেই সব অনুগত লোকদের জন্য কঠিন নয় যারা মনে করে সবশেষে তাদেরকে তাদের রবের নিকট ফিরে যেতে হবে'' আল বাক্কারা ৪৬। অনত্র এরশাদ হয়েছে ''যারা পরকাল বিশ্বাস করে তারা এই কিতাবের উপর বিশ্বাস রাখে এবং তাদের নামাজসমুহ (আদায় করার মাধ্যমে) সংরক্ষন করে'' সুরা অনআম ৯২। এক জায়গায় বর্নিত হয়েছে ''জাহান্নামীদের চিৎকার শুনে ফেরেস্তারা বলবে জাহান্নামে কেন এসেছ ? তারা বলবে আমরা সালাত আদায় করিনি এবং ভুক্তদের খাদ্য দেইনি। উক্ত আয়াতে বেনামাজী এবং কৃপন লোকদের জাহান্নামী হবার বিষয়টি অত্যান্ত সুষ্পষ্ট ! অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে ''কেয়ামতের দিন (যারা দুনিয়াতে নামাজ আদায় করেনি তাদেরকে) সেজদা করতে বলা হবে অতপর তারা সেজদা করতে পারবে না, তাদের দৃষ্টি থাকবে সেদিন লজ্জায় অবনত, তারা হবে (কঠিন) লাঞ্চনাগ্রস্ত। অথচ তারা যখন সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল তখন তাদেরকে সেজদার জন্য আহবান করা হত'' সূরা আল কলম ৪২,৪৩। আখেরাতের প্রতি দৃয় বিশ্বাসী সমপ্রদায়ের জন্য পবিত্র কুরআনের এই চারটি আয়াত যথেষ্ট যদিও আরও অসংখ্য জায়গায় যথাযথভাবে সালাত আদায়ের হুকুম দেওয়া হয়েছে। নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে একটি সতর্কবানী এই যে, যদি কেহ নামাজ যথাযথভাবে আদায় না করে যেমন সুরা কেরাত সহী সুদ্ধভাবে না পড়া, রুকু সেজদা ঠিক ঠিক মত আদায় না করা, অন্য মনস্ক হয়ে নামাজ আদায় করা তাহলে তার নামাজ গ্রহনযোগ্য নয়। কারন একজন আলেমের নিকট গিয়ে বা একজন কুরআনের শিক্ষক রেখে এটাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্ততপক্ষে একটি নির্ভরযোগ্য নামাজ শিক্ষা বই ক্রয় করে সেই বই অনুশীলন করে এই ত্রুটিগুলো সংশোধন করা ঈমানের দাবী ছিল ! এরশাদ হচ্ছে ''সেই সমস্ত নামাজীদের জন্য ধ্বংশ, যারা (যথাযথভাবে) তাদের নামাজ (আদায়ের) ব্যপাড়ে উদাসিন। যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে। সূরা আল মাউন। দূভর্াগ্যজনক বিষয় হচ্ছে নামাজ আদায় করা হয় আল্লাহর শাস্তি বা তার গজব থেকে আত্বরক্ষার জন্য আর উপরোক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে নামাজ আদায় করা সত্বেও এক শ্রেনীর লোক ধ্বংশ হবে অবহেলার সঙ্গে বা উদাসীনতার সঙ্গে এই নামাজ আদায় করার জন্য।
03.যাকাত: ইসলামের মৌলিক স্তম্ভ সমুহের মধ্যে অন্যতম হল যাকাত। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কয়েকটি নির্ধারিত খাতে নিজের সম্পদের একটি ক্ষুদ্র অংশ ব্যয় করাকেই যাকাত নামে অভিহিত করা হয়। মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত অসহায় হত দরিদ্র মানুষের ভাগ্য কিছুটা সুপ্রসন্ন করার লক্ষ্যে বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাকাত আদায়কে সালাত আদায়ের মতই ফরজ করেছেন। সুস্থ ও সুন্দর সমাজ বির্নিমানে এই যাকাত ব্যবস্থার বিকল্প নেই। দুনিয়ার কোন সমাজ বিজ্ঞানী আজ পর্যন্ত একথা বলতে পারেনি দারিদ্র বিমোচনে ইসলাম ধর্মের যাকাত ব্যবস্থা একটি অবৈজ্ঞানিক পন্থা। পবিত্র কুরআনের বহু জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিম জাতীকে নামাজ কায়েমের সঙ্গে যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন। এখানে একটি লক্ষনিয় বিষয় হল পবিত্র কুরআনের কোথাও নামাজের সঙ্গে যাকাত ব্যতিত অন্য আরও তিনটি মৌলিক স্তম্ভকে যেমন ঈমান রোজা ও হজ্জকে জুড়ে দেওয়া হয়নি যেমন এভাবে বলা হয়নি নামাজ আদায় কর এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আন, নামাজ আদায় কর এবং রমজান আসলে ত্রিশটি রোজা রাখ কিংবা নামাজ আদায় কর এবং হজ্জ কর ! বরং বহু আয়াতে এভাবে বলা হয়েছে (হে ঈমানদারগন) নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর। বস্তুত নামাজের সঙ্গে বার বার এভাবে যাকাত আদায়ের হুকুম দিয়ে মুসলিম জাতীকে আল্লাহ তায়ালা এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, যাকাত নামাজ আদায়ের মতই অবশ্য করনীয় একটি ফরজ এবাদত। গুরত্বের দিক দিয়ে নামাজ ও যাকাতের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। যে সমস্ত মুসলিম নর নারী যাকাত আদায় করেনা তাদের সংকির্ণ হৃদয় কম্পিত ও হেদায়েতের নূর দ্ধারা সংকির্ণ অন্তরজগত প্রশস্ত করার লক্ষ্যে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে ''আর (সেইসব) মুশরিকদের জন্য রয়েছে দূর্ভোগ, যারা যাকাত আদায় করে না, (আসলে) তারা পরকালকেই অস্বীকার করে'' সূরা হামীম সেজদাহ ৬/৭। এক জায়গায় এরশাদ হয়েছে ''যারা ব্যবসা বানিজ্য, ক্রয় বিক্রয় (এবং শত) ব্যস্ততার মধ্যেও নামাজ কায়েম এবং যাকাত আদায়ে গাফেল হয়না তারা সেদিনকে ভয় করে যেদিন মানুষের অন্তর বিপর্যস্ত এবং দৃষ্টি পাথর হয়ে যাবে'' সূরা আন নুর ৩৭। অনত্র এরশাদ হয়েছে ''আমি তোমাদেরকে যে রিজিক (অর্থ সম্পদ) দান করেছি সেখান থেকে মৃতু্য আসার পূর্বেই (ধর্মিয় কল্যান ও মানব কল্যানে) খরচ কর। অন্যথায় মৃতু্যর পর তোমরা বলবে, আমাকে আরও কিছুদিন দুনিয়াতে বাচিয়ে রাখলে না কেন ? তাহলেত আমি খরচ করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তভর্ুক্ত হয়ে যেতাম'' আল মুনাফিকুন ১০। যারা মনে করে একদিন তাদেরকে তাদের রবের নিকট দিয়ে দাড়াতে হবে তাদের জন্য এই তিনটি আয়াতই যথেষ্ট। অতপর এই সুষ্পষ্ট তিনটি আয়াত দেখার পরও যারা যাকাত আদায় করবে না তাহলে ধরে নিতে হবে পবিত্র কুরআনের ভাষায় ''তাদের হৃদয়ে কানে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের দৃষ্টির সম্মুখে রয়েছে (জাহেলিয়াতের) পর্দা আর তাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে অত্যান্ত কঠিন শাস্তী। সুরা আল বাক্কারা।
04.রোজা: রোজা হল ইসলামের গুরত্বপূর্ন পাচটি স্তম্ভ সমুহের একটি। রিপু দমন এবং নৈতিক ও আধ্বাতি্বক সংস্কার সাধনে রোজার ভূমিকা কোন অংশেই কম নয়। সকল নবী রাসুলদের অনুসারীদের জন্য রোজা সমভাবে অবশ্য করনীয় একটি ফরজ ইবাদত রূপে পরিগনিত ছিল। সহজ কথায় সুবহে সাদিক থেকে সন্ধা রজনী পর্যন্ত পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নামই হল রোজা। এই দুইটি কর্মনীতি ছাড়াও সকল প্রকার অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা রোজা কবুলের অন্যতম শর্ত। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহিস সালাম এরশাদ করেন মিথ্যা কথা বা মন্দ কাজ যারা পরিত্যগ করতে পারেনি তাদের রোজা রাখাতে কোনই লাভ নেই। আর আধুনিক বিজ্ঞান মানব দেহের জন্য রোজার বহুমুখি কল্যান বা উপকারীতা স্বীকার করে নিয়েছেন। রোজা যেমন প্রবৃত্তি দমনে সহায়ক ঠিক তেমনিভাবে নৈতিক সংশোধনেও রোজার ভুমিকা অপরিসীম। একজন সচ্ছল মানুষ রোজা রেখে যখন ক্ষুধার যন্ত্রনা অনুভব করে তখন সেই মানুষটি গরিব অসহায় লোকদের কষ্ট উপলদ্ধি করতে পারে যারা জীবন ধারনের জন্য সামান্য মৌলিক চাহিদা আহার যোগাতে পারেনা। সংগত কারনেই তখন তাদের অন্তরজগতে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নৈতিক চেতণা জাগ্রত হয়ে উঠে অতপর হত দরিদ্র লোকদের প্রতি কর্তব্য সমন্ধেও তারা কিছুটা সচেতন হয়ে উঠে। বস্তুত রোজার মৌলিক শিক্ষা সমুহের মধ্যে এটিই অন্যতম। মানব জীবনে রমজানের তাৎপর্য যারা উপলদ্ধি করতে পারেনি তাদের মনোজগতের অবস্থার কোনই পরিবর্তন হয়না। তাদের বৈশিষ্ট হল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একমাস হয়ত রোজা পালন করে অতপর রোজার শেষভাগে যখন যাকাত আদায়ের নির্দেশ আসে তখন তারা সেই হুকুম পালন না করে পৃষ্ট প্রদর্শন করে বা ঠিকভাবে যাকাত আদায় না করে জাহেলিয়াতের তীমির অন্ধকারে হারিয়ে যায়। একমাস হয়ত রিপূ দমন করে যাচ্ছিল অতপর যখন সেই মহান মাসটি অতিক্রান্ত হয় তখন পূনরায় মন্দ কর্মে লিপ্ত হয়ে যায়। সেই জন্যই নবী রাসুল আলাইহিস সালামগন ফরজ রোজা ব্যতিত অন্য সময়ও বেশি বেশি নফল রোজা রেখে সমগ্র উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। শেষনবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহিস সালামও বেশি বেশি নফল রোজা রাখায় অভ্যস্ত ছিলেন যেন উম্মতে মোহাম্মদি তার পবিত্র জীবন দর্শন থেকে শিক্ষা গ্রহন করে অতি্বক নৈতিক ও আধ্বাতি্বক শক্তি অর্জন পারে।
05.হজ্জ: ইসলামী জীবন দর্শনের রাজ্যে হজ্জের গুরত্ব অপরিসীম বলা যায়। ইহা ইসলামের পাচটি মৌলিক স্তম্ভ সমুহের মধ্যে একটি এবং একে ইসলামের পঞ্চম ভিত্তিরূপে অভিহিত করা হয়। হজ্জ অর্থ সংকল্প করা বা সফরের নিয়ত করা। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে ''যাহারা এই ঘর পর্যন্ত পৌছার সামর্থ রাখে তাহারা যেন অবশ্যই (হজ্জ পালন করার উদ্দেশ্য) সেখানে পৌছে, এই নির্দেশ যারা অমান্য করবে তাদের জেনে রাখা উচিৎ আল্লাহ তায়ালা জগৎবাসীর প্রতি কিছুমাত্র মুক্ষাপেক্ষি নন'' সূরা আল ইমরান ৯৭। একাধিক সহীহ হাদিসেও মুসলিম জাতীকে সামর্থ থাকলে হজ্জ করতে আদেশ করা হয়েছে। কিছু হাদিসে হজ্জ অমান্য কারীদের উপর কুফরের ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। এবং যারা বস্তুগত স্বাথ্য ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ সম্পন্ন করবে তাদের জন্য বিরাট প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এরশাদ হয়েছে ''যে ব্যক্তি হজ্জের উদ্দেশ্যে খানায়ে কাবায় আগমন করে তারপর কোন প্রকার গোনাহের কাজ না করে সে ব্যক্তি এমন নিষ্কলুষ ও পবিত্র হয়ে প্রত্যাবর্তন করে যে, তার মাতা যেমন প্রথম দিন তাকে প্রসব করেছিল। মুসলিম শরীফ ৩১৫৯। এক্ষেত্রে একটি সতর্কবানী হল কেহ যদি হক্কুল ইবাদ বা মানুষের হক্ক নষ্ট করে থাকে সে এই হাদিসের আওতাভুক্ত হবে না কারন হক্কুল ইবাদ বা মানুষের হক্ক নষ্ট হয়ে থাকলে খানায়ে কাবার গিলাফ ধরে থেকে কেহ যদি আমরন মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে তবুও সে নিষকৃতি পাবেনা। এখন মানুষের হক্ক সমুহ একটু বিশ্লেষন করা যাক। ১। কেহ যদি কাহারো কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তার টাকা ফেরত প্রদান করতে হবে। ২। কেহ যদি কাহারো সম্পদ অন্যায় ভাবে ভোগ করে থাকে যেমন চূরি, ডাকাতি, চাদাবাজি, সীনতাই এবং অবৈধভাবে কাহারো সম্পদ জোরপূর্বক বা প্রতারনার মাধ্যমে নিজের নামে লিখিয়ে নিয়ে থাকে তাহলে তাদের সকলের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। ৩। কেহ যদি খাদ্যে ভেজাল দিয়ে কোন জনপদ বাসীর ক্ষতি সাধন করে থাকে তাহলে তাকে সেই জনপদ বাসীর নিকট প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ৪। কেহ যদি অন্যায়ভাবে কাহারো উপর শারিরিক নির্যাতন বা আঘাত করে থাকে তাহলে তাহার নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। ৫। কেহ যদি ইলেক্টনিঙ্ পন্য রিপিয়ারিং ব্যবসায় সম্পৃক্ত থেকে রিপেয়ার বা মেরামত করতে গিয়ে অনুমতি ব্যতিত কাহারো পন্যের ভাল পার্টস খুলে রেখে কমমুল্যের পার্টস লাগিয়ে দেয় তাহলে সে লোকের কাছেও ক্ষমা চাইতে হবে। ৬। কোন অফিসার যদি কাহারো কাছ থেকে অন্যায়ভাবে ঘুষ নিয়ে থাকে (তাহা যে কারনেই হউক না কেন) তাহলে তার ঘুষের টাকা সেই লোককে ফিরিয়ে দিতে হবে। ৭। কেহ যদি কাহারো অন্তরে অনার্থক কটু কথার মাধ্যমে কষ্ট দিয়ে থাকে তাহলে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ৮। কেহ যদি মাতা পিতার হক্ক আদায় না করে থাকে তাহলে যথারিতি তাদের হক্ক প্রতিনিয়ত আদায় করতে হবে। ৯। কাহারো নিকট যদি সুদের টাকা অবশিষ্ট থাকে তাহলে সুদ ছেড়ে দিতে হবে। ১০। কেহ যদি অন্যায় ভাবে স্ত্রীর উপর নির্যাতন করে থাকে তাহলে তাকে স্ত্রীর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে, হয়ত কেহ বলবে স্ত্রীকে নির্যাতন করার অধিকার ইসলাম সংরক্ষন করেছে, বস্তুত ইহা ইসলামের প্রতি একটি জঘন্যতম অপবাদ বৈ কিছু নয়। ইসলাম নারী নির্যাতনের নিন্দা জানায়। তবে কোন নারী যদি স্বামীর অধিকার আদায় না করে বিদ্রোহী নীতি অবলম্বন করে বা যদি বেপরোয়া চলাফেরা করে যাহা ইসলাম সম্মত নয় কিংবা যদি পরিবারের বা প্রতিবেশির সঙ্গে সামাজিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরন করে তাহলে তাকে প্রথমত নৈতিক প্রশিক্ষন দিতে হবে এবং কুরআন হাদিস দিয়ে নসিহত করতে হবে অতপর যদি এগুলো তার হৃদয়ে রেখাপাত না করে তাহলে কিছুটা শাসন করা যাইবে কিন্তু নির্যাতন করা যাইবে না কারন এগুলো কখনো নির্যাতন করে সংশোধন করা যায়না, কিছুটা শাসনে যদি কোন কাজ না হয় তাহলে তাকে তালাকের ভয় দেখাতে হবে, এতেও যদি কাজ না হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে স্ত্রী তার জীবন নিয়ে বিকল্প চিন্তা করছে, সবশেষে স্ত্রীর অবিভাবক থেকে একজন এবং ম্বামীর অবিভাবক থেকে একজনকে নিয়ে সালিশ বসানো যেতে পারে, পবিত্র কুরআনে এই সালিশের কথা অত্যান্ত সুষ্পষ্টভাবে বর্নিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, এখানে যে দশটি নৈতিক অপরাধ নিয়ে আলোচিত হল হজ্জের তাৎপর্যের সঙ্গে এগুলোর কোনই সম্পর্ক নেই। উক্ত আলোচনায় মুলত একথাই বুঝানো উদ্দেশ্য যে হাদিসটিতে হজ্জের বিনিময়ে সকল গোনাহ ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সে গোনাহের মধ্যে হক্কুল ইবাদ বা মানুষের হক্ক অন্তুভুক্ত নয়। এই দশটি ছাড়াও আরও বহুভাবে মানুষ মানুষের হক্ক নষ্ট করে থাকে ''বান্দার হক্ক'' নামে সতন্ত্র একটি অধ্যায়ে এই বিষয়টি নিয়ে ব্যপকভাবে আলোচনা হইবে এবং সেই সঙ্গে ''মানব জীবনে হজ্জের তাৎপর্য কি'' এই বিষয়ে অন্য একটি প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা হইবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন