শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১

আর্টিকেলস # ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস

ইসলামের মৌলিক আক্কিদা বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত ৭ টি বিষয় যথা তাওহিদ,রিসালাত, ফেরেস্তাকুল, কিতাব, আখেরাত, তাকদির, মউত। 
তাওহিদ: ইসলামের মৌলিক আক্কিদা বিশ্বাসের মধ্যে প্রথম ও সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন বিষয়টির নাম হচ্ছে তাওহিদ বা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস।
তাওহিদের ব্যক্ষা দিতে গিয়ে বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন ''বল আল্লাহ তিনি একক। তিনি (সৃষ্টিজগতের) কাহারো প্রতি মুক্ষাপেক্ষি নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি। কাহারো কাছ থেকে জন্ম নেননি। (আকাশ পৃথিবীতে) তার সমতুল্যে কেহ নেই'' সূরা ইখলাস। পবিত্র কুরআনের অনত্র তার অসীম ক্ষমতা ও গুনাবলী বর্ননা করতে গিয়ে এরশাদ হয়েছে ''আল্লাহ ব্যতিত (সৃষ্টিজগতের) আর কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জিব। (মহাবিশ্বের) সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করতে পারেনা। আসমান যমীনে যা কিছু আছে সবই তার। বিশ্বজগতে কে আছে এমন যে, তার নিকট সুপারিশ করবে তার অনুমতি ছাড়া। দৃষ্টির সম্মুখে ও দৃষ্টির আরালে যাহা কিছু আছে আল্লাহ তা সবই জানেন। তার জ্ঞান থেকে কেহ কিছুকে পরিবেষ্টন করতে পারেনা। কিন্তু যতটুকো তিনি ই্চ্ছা মানুষের জন্য ছেড়ে দেন। তার সিংহাসন (কুদরতিভাবে) আকাশ পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে আছে। আর এই সামান্য বস্তুকে ধারন করা তার পক্ষে মুটেও কঠিন নয়। তিনি সবোচ্চ ও সর্বপেক্ষা বড়। মানবজাতীর কাছে এভাবে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে তাওহিদের মূলনীতি ব্যক্ষা করেছেন যেন মানবজাতী শিরকে নিমজ্জিত না হয়। পবিত্র কুরআনের অনত্র আরও কতিপয় গুনাবলী ব্যক্ত করা হয়েছে যেন স্রষ্টার প্রতি মানবজাতীর ধারণা সুষ্পষ্ট হয়। তাওহিদের ক্ষেত্রে কুরআনের সামগ্রিক আলোচনার দিকে তাকালে যে আক্কিদা বিশ্বাস নির্ধারন হয় তাহল আল্লাহ তিনি এক ও একক। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহা নেই। তিনি মহাবিশ্বের স্রষ্টা। তিনি সমগ্র প্রানীজগতকে লালন পালন করেন তাদের কাছে বিভিন্ন উপায়ে রিজিক পৌছিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। তিনি সৃষ্টিকুলের ভাগ্য নির্মাতা আবার তিনি ভাগ্য বিপর্যস্ত করেন। তিনি মানবজাতীর কাছে তার বার্তা পাঠান যেন মানবগোষ্টি তার নির্দেশিত পথে চলে। তিনি প্রানীজগতের জীবন মৃতু্য নিয়ন্ত্রন করেন। তার ইচ্ছা ব্যতিরেকে কেহ কোন কাজ সম্পন্ন করতে পারেনা। তিনি প্রতিদান দিবষের মালিক। বস্তুজগত নশ্বর কিন্তু তিনি অবিনশ্বর। তার পূর্বে কেহ নেই তার পরেও কেহ নেই। তার ক্লান্তি নেই নিন্দ্রা নেই। তার আসন আকাশ পৃথিবী পরিব্যপ্ত। মহাবিশ্বে তার সমতুল্যে কেহ নেই। উপরোক্ত আলোচনায় সংক্ষেপে বিশ্বস্রষ্টার পরিচয় পেশ করা হল একটি সতন্ত্র অধ্যায়ে ''তাওহিদের তাৎপর্য'' আলোচনা করা হইবে।

রিসালাত: ইসলামের মৌলিক আক্কিদা বিশ্বাসের মধ্যে দ্বিতীয় গুরত্বপূর্ন বিষয়বস্তুর নাম রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস। রিসালাতের আভিধানিক অর্থ সংবাদদাতা বা বার্তাবাহক যিনি বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর পক্ষ থেকে হেদায়েতের ইমামরূপে বা নবী রাসুলররূপে মানবজাতীর নিকট প্রেরিত হন যেন মানবজাতী বিশ্বস্রষ্টার নির্দেশিত পথে চলতে পারে। কয়েকটি মুলনীতিকে সামনে রেখে এই হেদায়েতের ইমামদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা প্রয়োজন। ১। কোন নিদ্রিষ্ট সংখ্যার উপর বিশ্বাস স্থাপন না করে অসংখ্য নবী রাসুলদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। যদিও কয়েকটি হাদিসে এক লক্ষ বা দুই লক্ষ নবী রাসুলদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে বলা হয়েছে। এই সমস্ত হাদিসের উপর বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা হল যদি ১,২৪০০০ নবী রাসুলের উপর বিশ্বাস করা হয় তাহলে যদি প্রকৃতই ২,২৪০০০ নবী রাসুল এসে থাকে তাহলে ১,২৪০০০ নবীকে অস্বীকার করা হবে ! আর যদি ২,২৪০০০ নবী রাসুলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা হয় আর যদি প্রকৃতই ১,২৪০০০ নবী রাসুল এসে থাকে তাহলে এমন ১,২৪০০০ লোককে নবী হিসাবে স্বীকার করে নিতে হবে যারা প্রকৃতপক্ষে নবী নয় ! অথচ এই দুইটি আক্কিদার কোন একটিও ইমানের জন্য নিরাপদ নয়। সুতরাং সংখ্যা নির্ধারন না করে অসংখ্য নবী রাসুলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাই হল সঠিক পন্থা। আমরা যদি বিষয়টি নিয়ে মুসলিম জাতীর মূল ব্যবহারিক গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের দিকে ফিরে যাই তাহলে কোন সমস্যাই থাকেনা। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে ''এমন কোন জাতী নেই যেখানে সতর্ককারী প্রেরণ করা হয়নি'' সকলেই অবহিত যে, কোন ঐতিহাসিক আজ পর্যন্ত এর কোন হিসাব দিতে পারেনি যে, কত সংখ্যক মানবগোষ্টি দুনিয়াতে এসেছে। বহু সংখ্যক মানবগোষ্টি আগমন করেছে এটাই সত্য। সুতরাং যদি সংখ্যা নির্ধারন না করে অসংখ্য নবী রাসুলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা হয় তাহলে বিষয়টি যেমন যুক্তিপূর্ন ও বিজ্ঞান সম্মত হয় ঠিক তেমনিভাবে ইমানের জন্যও নিরাপদ মনে হয়। আর যদি কোন হাদিসের আলোকে সংখ্যা নিধর্ারন করতেই হয় তাহলে দেখতে হবে হাদিসগুলো সহীহ কিনা, যদি সহীহ হয়ে থাকে তাহলে তুলনামুলকভাবে যে হাদিসটি সবচেয়ে বেশি সহীহ সেই হাদিসটিকে ভিত্তি করে সংখ্যা নির্ধারন করা যেতে পারে। এই দায়িত্বটি মোহাদ্দেসগনের উপর বর্তায়। ২। একথা দৃয়তার সঙ্গে বিশ্বাস করা যে, তাদের আনীত জীবন দর্শন অনুসরনের মধ্যেই স্রষ্টার সন্তুষ্টি রয়েছে। ৩। একথা বিশ্বাস করা যে, তাদের আনীত জীবন দর্শন ত্রুটি বিচু্যতি থেকে সম্পূর্ন মুক্ত এবং এরই মধ্যে ইহলোক ও পরলোকের সর্বাঙ্গিন কল্যান নিহীত কারন কেহ যদি বিশ্বাস না করে এই দর্শন ত্রুটিমুক্ত এবং এরই মধ্যে সর্বাঙ্গিন কল্যান নিহীত আছে তাহলে সে লোকটি মানব রচিত মতাদর্শ অনুসরন এবং মানব জীবনের জন্য একেই কল্যানকর বিশ্বাস করে নিজের আত্বা কলুষিত করবে এটাই স্বাভাবিক। ৪। একথা বিশ্বাস করা যে, তার আনীত জীবন দর্শনকে ব্যক্তি পারিবারিক ও সামষ্টিক জীবনে অনুসরনের মধ্যেই পরজগতের সফলতা এবং এর অনুসরন না করার মধ্যেই পরজগতের ব্যর্থতা নিহীত। বস্তুত এই আন্তরিক বিশ্বাস না থাকার ফলেই মুসলিম জাতীর শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ লোক মহানবীর জীবনাদর্শ ভুলে গিয়ে এক আত্ববিষ্মিত জাতীতে পরিনত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে ''যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার প্রেরিত রাসুলের আদেশ সমুহ অমান্য করল সে স্পষ্ট গোমরাহির মধ্যে নিমজ্জিত হলো'' যারা এভাবে রাসুলের আনীত জীবন দর্শন অনুসরন করা থেকে পৃষ্টপ্রদর্শন করে গোমরাহির মধ্যে নিমজ্জিত তারা নরকের অধিবাসী হবে এতে কোনই সন্দেহ নেই। ৫। একথা বিশ্বাস করা যে, তাদের দৈহিক ও মানুসিক সত্বার নিয়ন্ত্রক ছিলেন সয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা যার ফলে তারা গোনাহ থেকে মুক্ত ছিলেন যদিও নবী রাসুলদের দ্ধারা কিছু কিছু ভুল হয়ে গেছে কিন্তু সেগুলো ইচ্ছাকৃত কোন গোনাহ ছিল না, সেগুলো ছিল অনিশ্চাকৃত ভুল। তারা যেহেতু কুফরী শক্তির মোকাবেলায় প্রত্যেকেই মানব জাতীর সংস্কারক হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন সুতরাং কুফরী শক্তির মোকাবেলা করতে গিয়ে কোন অপ্রিতিকর ঘটনার সম্মুখিন হয়ে গিয়ে কিছু ভুল ক্রটি হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। বস্তুত নবী রাসুলগন ইচ্ছাকৃত গোনাহ করতেন এই বিশ্বাস দ্ধারা মানবাত্বা কলুষিত হয়। ৬। একথা বিশ্বাস করা যে, পৃথিবীতে নবী রাসুলের আর আগমন হবে না এবং নবী মোহম্মাদ শেষনবী। ৭। একথা বিশ্বাস করা যে, নবী মোহাম্মদের নবুয়াত অনাগত সকল যুগের সকল জাতীর জন্য বিশ্বজনীন। উক্ত আলোচনায় রিসালাত বিশ্বাসের রূপরেখা পেশ করা হল। একটি সতন্ত্র অধ্যায়ে ''রিসালাতের তাৎপর্য'' আলোচনা করা হইবে।
কিতাব: ইসলামের মৌলিক আক্কিদা বিশ্বাসের মধ্যে তৃত্বীয় গুরত্বপূর্ন বিষয়বস্তুর নাম হল রাসুলদের প্রতি অবতির্ন কিতাব সমুহের প্রতি বিশ্বাস। ইসলাম বিদ্বেসী দার্শনিকগন স্রষ্টা থেকে মানব সমপ্রদায়ের জন্য কিতাবের প্রয়োজীয়তা অস্বীকার করে থাকে। এটা যেমন অজ্ঞতা তেমন এক ধরনের গোড়ামী। যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহাবিশ্ব এবং এর যাবতিয় বস্তু সৃজন করে মানবসত্বার অস্তিত্ব রক্ষার উপযোগী করে তার ভারসাম্যতা রক্ষা করেছেন সেই আল্লাহ পাক শুধু কতিপয় বার্তাবাহক প্রেরন করে কিছু কথামালার সমষ্টির মাধ্যমে মানব সমপ্রদায়কে কিছু আক্কিদাগত উপদেশ প্রদান করার মাধ্যমে তার দায়িত্ব শেষ করবেন ইহা কেমন করে সম্ভব হতে পারে ? যে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন পৃথিবী থেকে সূর্য চন্দ্রকে একটি ভারসাম্যপূর্ন দুরত্বে স্থাপন করে সকল প্রানীকুল এবং তার বুকে অবস্থানরত মানবগোষ্টিকে বাচিয়ে রেখেছেন, যিনি মহাকাশের প্রত্যেকটি গ্রহ নক্ষত্রের জন্য কক্ষপথ সৃষ্টি করে পথ দেখিয়েছেন তিনি আশরাফুল মাখলুকাত মানবজাতীর জন্য কোন প্রত্যাদেশ না পাঠিয়ে আন্তাজ অনুমানের ভিত্তিতে জীবন পরিচালনা করার জন্য জন্তু জানোয়ারের মত ধরনীর মাঠে ছেড়ে দিবেন ইহা কেমন করে সম্ভব হতে পারে ? যে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন প্রত্যেক জনপদে নবী রাসুল পাঠিয়েছেন মানবমন্ডলির জন্য দিকনির্দেশনা পত্র দিয়ে অথচ অসংখ্য নবী রাসুল মানবগোষ্টিকে এই পত্র শুনাতে গিয়ে মুতু্যর মুখে পতিত হয়েছেন যুগে যুগে ! সেই মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন ''তার ক্ষুদ্র সৃষ্টি মানুষ তার হেদায়েত থেকে পৃষ্ট প্রদর্শন করে মানব রচিত মতাদর্শ অনুসরন করবে তার পক্ষে এই ভয়ংকর কর্মনীতি কেমন করে মেনে নেয়া সম্ভব হতে পারে'' সুতরাং সমগ্র মানবজাতীকে পথ প্রদর্শন করার জন্য তার পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা পত্র আসাটাই হচ্ছে বিবেক সম্মত। ইহা এমন এক যুক্তিপূর্ন ও বিচক্ষনতা পূর্ন বিষয় যে, কোন সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন লোক এই বিষয়টিকে অস্বীকৃতি জানাতে পারেনা। মহাকালের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করলে দেখতে পাই যুগে যুগে মানব সমপ্রদায় বিশ্বস্রষ্টার পক্ষ থেকে প্রত্যাদেশ প্রাপ্তীর প্রত্যাসা করে আসছিল। যে প্রাগঐতিহাসিক যুগের মানুষ ধরনীকে পাপাচার দিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিল সেই বিদ্রোহী সমপ্রদায়ও একজন চূরান্ত নবীর অপেক্ষায় ছিল, সবাই প্রতিক্ষার প্রহর গুনছিল সেই সূর্য কখন উদিত হবে অতপর সেই হেদায়েতের সুর্য যখন ধরনীর আকাশে উদিত হল তখন সবার নিকট হয়ে গেল বিষয়টি অপ্রিতিকর ! এর প্রকৃত কারন ছিল প্রবৃত্তির দাসত্ব। যুগে যুগে যে সমস্ত সম্প্রদায় পাপাচারে লিপ্ত হয়ে প্রবৃত্তির দাসত্বে লিপ্ত হয়েছিল তারা নবী রাসুলদের আনীত পবিত্র জীবন দর্শন অনুসরন করতে সম্মত হয়নি কারন একে গ্রহন করলেই প্রবৃত্তির দাসত্ব পরিত্যগ করে সর্বশক্তিমান আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তাদের জীবন পরিচালিত করতে হত। অতিত ইতিহাস অধ্যায়ন করলে দেখা যায় যারাই নবী রাসুলদের হেদায়েত অনুসরন না করে স্বেচ্ছাচারিতার পথ অবলম্বন করেছিল মহান আল্লাহ এমন প্রত্যেক সমপ্রদায়কে সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে এবং তাদের হায়াতকে সংকোচিত করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে ইহজগতেই শেষ করে দিয়েছেন ! অতিত ইতিহাসের এই ভয়ংকর অধ্যায় থেকে শিক্ষা গ্রহন করে যারাই এখন নবী মোহম্মদের আনীত বিশ্বজনীন গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের শিক্ষামালা দ্ধারা আত্বাকে পরিশুদ্ধ করবে তারাই হবে সফলকাম পক্ষান্তরে যারা এর বিপড়িত কর্মনীতি অবলম্বন করবে ইহজগতে কিছুদিনের জন্য তারা ভোগ বিলাসের সুযোগ পেলেও পরজগতের অনন্তকালের শাস্তী থেকে কেহ তাদেরকে বাচাতে পারবেনা। কয়েকটি মুলনীতিকে সামনে রেখে কিতাব সমুহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা প্রয়োজন ১। মহান আল্লাহ হাদিস অনুযায়ী ১০৪ খানা আসমানী কিতাব অবতির্ন করেছেন তার মধ্যে মূল চারটি হল যথা হযরত মুসার প্রতি তাওরাত, হযরত দাউদের প্রতি যবুর, হযরত ঈসার প্রতি ইঞ্জিল ও শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর উপর আল কুরআন। অন্য কয়েকজন রাসুলের উপর বাকি একশতটি এভাবে মোট ১০৪টি। ২। পূর্বে যে সমস্ত কিতাব এসেছিল সেগুলোর বিধান রহিত হয়েছে। ৩। মানবজাতীর জন্য পবিত্র কুরআন হচ্ছে সর্বশেষ কিতাব। ৪। পবিত্র কুরআনের হেদায়েত অনাগত দিনের সকল মানব সমপ্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য। ৫। মুসলিম সহ সমগ্র মানবমন্ডলির সফলতা ব্যর্থতা এই কিতাব অনুসরন করা না করার উপরই এখন নির্ভর করছে।
আখেরাত: ইসলামের মৌলিক আক্কিদা বিশ্বাসের মধ্যে চতুর্থ গুরত্বপূর্ন বিষয়বস্তুর নাম হল আখেরাত বা পরজগতের প্রতি বিশ্বাস। পার্থিব জগৎ ব্যতিত আরও একটি আবাস্থল মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন মানবজাতীর জন্য নির্ধারন করে রেখেছেন মানুষের কর্মনীতির ভিত্তিতে তাদেরকে কর্মফল প্রদান করার জন্য, দৃয়তার সঙ্গে এই বিষয়বস্তুর উপর বিশ্বাস স্থাপন করার নামই হল পরকাল বিশ্বাস। মহাকালের ইতিহাসে এমন কোন জাতীর আবির্ভাব হয়নি যাদের মধ্যে পরকালের বিষয়ে কম বেশি কতৌহল পরিলক্ষিত হয়নি। মানুষের জীবনের প্রথম পর্যায় অতিক্রম করে মুতু্যর পর অদৃশ্য কোন জগতে দ্বিতীয় পর্যায়ে জীবনের অস্তিত্ব ফিয়ে পাওয়ার বিষয়টি যদিও অনুভুতির জগতে ধরা দেওয়ার মতো কোন বস্তু নয়, কিংবা বিজ্ঞান দিয়েও এর সরূপ ব্যক্ষা করা সম্ভব নয় তথাপি পরকাল বা প্রতিদান দিবষের অস্তিত্বই হল মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি ন্যয় সংগত কারন পরকালের অস্তিত্ব যদি না থাকে তাহলে নেককারগন যারা দুনিয়াতে ভোগ বিলাস ত্যাগ করে জীবনভর মানুষের কল্যানের জন্য কাজ করেছে তাদের কি হবে ? পক্ষান্তরে যারা পাপকর্ম দিয়ে ধরনীকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে, যারা নির্দোশ মানুষের উপর অত্যাচার করে বা হত্যা করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুনিয়ার আদালত থেকে বেচে গেছে তাদের বিচার কে করবে ? তাদের জন্য যদি অদৃশ্য জগতে কোন আদালত না থাকে তাহলে কি বিষয়টি বিচার বুদ্ধি সম্মত হল ? যে লোকটি ১০০০ মানুষ হত্যা করেছে সে লোকটি যদি দুনিয়ার আদালতে ধরা পরে তার ফাসীও হয়ে যায় তাহলে ১০০০ লোক হত্যার সমপর্যায়ের বিচার কি হল ? যদি মানুষের মৃতু্যর পর পূনরায় জীবিত করা যেত অতপর লোকটিকে যদি ১০০০ বার জিবিত করে ১০০০ বার ফাসি দেওয়া যেত তাহলে ইনসাফপূর্ন বিচার হত। একটি মাত্র ফাসির মাধ্যমে কখনো ১০০০ লোকের ক্ষতিপূরন সম্ভব নয়, কারন এই ১০০০ লোকের মৃতু্যর জন্য ধরনীর অপূরনিয় ক্ষতি হয়েছে যেমন এই এক হাজার লোকের মধ্যে হয়ত এমন বহ লোক ছিল যাদের মাধ্যমে গোটা সংসার চলত, হয়ত এমন বহু ব্যবসায়ী প্রতিষ্টানের মালিক ছিল যাদের মাধ্যমে শত শত লোকের কর্মসংস্থান হয়েছিল, হয়ত এমন বহু দানশীল ছিল যারা জীবন ভর ভাগ্যহত মানুষের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করার কাজ করত, যেহেতু ধরনীর এই বিরাট ঘাটতিগুলো মাত্র একটি মৃতু্যদন্ডের মাধ্যমে পূরন করা সম্ভব নয় তাই একটি অদৃশ্য জগতের আদালত থাকা ইনসাফের দাবী যেখানে এই ১০০০ লোকের হত্যাকারীকে জীবিত রাখার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ভয়ংকর শাস্তী প্রদান করা যায়। সুতরাং পরকাল থাকার বিষয়টি শুধু বিচারবুদ্ধি সম্মত নয় বরং এর অস্তিত্ব না থাকা মানবজাতীর জন্য একটি বেদনাদায়ক বিষয়।
ফেরেস্তা: ইসলামের মৌলিক আক্কিদা বিশ্বাসের মধ্যে পঞ্চম গুরত্বপূর্ন বিষয়বস্তুর নাম হল ফেরেস্তাদের প্রতি বিশ্বাস। একথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বিশ্বজগত পরিচালনা এবং তার তাসবিহ পাঠ করার জন্য অসংখ্য ফেরেস্তা সৃষ্টি করেছেন যারা সত্বাগত ভাবে অদৃশ্য যাদেরকে মানুষ দেখতে পায়না। এবং আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন প্রত্যেকটি মানুষের সামনে পিছনে প্রহরি নিযুক্ত করে রেখেছেন এই বিষয়টির প্রতিও দৃয়তার সঙ্গে বিশ্বাস রাখা। অনেকে প্রশ্ন করতে পারে যেহেতু আল্লাহ আলেমুল গায়েব এবং মানুষের অন্তরজগতের সকল অবস্থাই তিনি জানেন সুতরাং অযথা কেন তিনি ফেরেস্তা নিযুক্ত করলেন ? এটা কি এক ধরনের বেহুদা কাজ নয় ? বস্তুত আল্লাহ পাকের প্রত্যেকটি কাজে বিরাট হেকমত লুকায়িত। অসীম জ্ঞান সম্পন্ন কোন সত্বার কর্ম রহস্য কোন সসীম জ্ঞান সম্পন্ন সত্বার পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব নয় যদিও কেহ প্রকৃতির সকল রহস্য অনুধাবন করে ফেলে। ক্ষুদ্র জ্ঞানের আলোকে বলতে চাই মানুষের সম্মুখে পিছনে এবং সেই সঙ্গে মানুষের কর্ম সমুহ সংরক্ষনকারী দুইজন ফেরেস্তা নিযুক্ত করার তাৎপর্য হল মানুষ যেন প্রতিনিয়ত অনুধাবন করে আমার সম্মুখে বিশ্বস্রষ্টার উপস্থিতি না থাকলেও ফেরেস্তারা আমাকে ঘিরে রেখেছে এবং আমার অবস্থা পর্যবেক্ষন করছে, আমি স্রষ্টার সঙ্গে বিদ্রোহের সিমানা ছাড়িয়ে গেলে এমনও হতে পারে তারাই আমাকে খোদাতায়ালার হুকুমে ধ্বংশ করে দিবে যেহেতু পূর্বে সকল জাতীকে ফেরেস্তার মাধ্যমে ধব্বংশ করা হয়েছে সেহেতু বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়া যায়না। ফেরেস্তাদের প্রতি বিশ্বাসের দ্বিতীয় তাৎপর্য হল দুনিয়াতে বহু আত্ববিষ্মিত মানুষ আছে যারা বলে আমরা বিচার দিবষে বলব আমরা কিছুই করিনি, কুরআন হাদিস থেকেও একথার কিছুটা ইংগিত পাওয়া যায় যারা বিচার দিবষে সবকিছুই অস্বীকার করে বলবে আমরা অপরাধ করিনি ! আল্লাহ তায়ালা যেহেতু ন্যায় বিচারক সুতরাং স্বাক্ষী ব্যতিত বিচার করা তার মর্যাদার পরিপহ্নি সেই জন্যই ফেরেস্তা দিয়ে রেকর্ড করা হচ্ছে যেন বিচার দিবষে তাদেরকে স্বাক্ষী সরূপ উপস্থিত করা যায়, যখনই ফেরেস্তা উপস্থিত হয়ে তার আমলনামা দেখিয়ে বলবে স্বরণ করে দেখ অমুক সময় অমুক এই কাজটি করেছিলে কিনা তখন মানুষের সেই কাজগুলোর কথা স্বরণ হবে ! এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিচার দিবষে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েও পরাক্রমশালী প্রভুর সম্মুখে দাড়িয়ে মানুষ কিভাবে মিথ্যা বলবে ? আসলে মানুষ সেদিনের ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে শুধু চিন্তায় ব্যকুল থাকবে কিভাবে আজ এখান থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তখন অপরাধীরা শুধু মুক্তির উপায় খুজবে এক পর্যায়ে তারা ভাববে দেখি অপরাধগুলো অস্বীকার করে বাচতে পারি কিনা ! যেহেতু দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তাদের আত্বা কলুষিত ছিল সেই গোনাহের প্রভাব অন্তরে নিয়েই তারা কিয়ামতে উঠে দাড়াবে ফলে সেখানেও তাদের হৃদয় হবে কলুষিত এবং অস্থিরতায় পূর্ন। আত্বা কলুষিত থাকায় সেখানেও তারা স্রষ্টার সামনে দাড়িয়ে মিথ্যা বলবে! আবার এমনও হতে পারে কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে দুনিয়ার সকল কর্মকান্ডের কথা তারা ভুলে যাবে। পক্ষান্তরে সেখানে মুত্তাকীদের হৃদয় থাকবে প্রশান্ত, ইমান এবং নেকআমল থাকায় কোন কষ্টই তাদের মধ্যে অনুভূত হবেনা। ফেরেস্তাদের প্রতি বিশ্বাসের তৃত্বীয় তাৎপর্য হল আল্লাহ ফেরেস্তাদেরকে গোনাহের প্রবনতা না দিয়ে শুধু নেক কাজের প্রবনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন ফলে তাদের দৈহিক ও মানুসিক উভয় সত্বাই পবিত্র। তারা কখনো স্রষ্টার হুকুম অমান্য করেনা, প্রতিনিয়ত তাসবিহ পাঠ করে থাকে, এমন মহা পবিত্র ফেরেস্তারা যদি একজন মানুষের সঙ্গি থাকে তাহলে তাদের সম্মুখে সেই মানুষটির পক্ষে কিভাবে কুকর্মে লিপ্ত হওয়া সম্ভব ? এমন মহা সম্মানিত ফেরেস্তার সম্মুখে নৈতিক চেতণা জাগ্রত রেখে মানুষ পাপকর্ম করতে লজ্জাবোধ করবে ইহাই স্বাভাবিক নয় কি ? ফেরেস্তাদের প্রতি বিশ্বাসের চতুর্থ তাৎপর্য হল যেহেতু ফেরেস্তাগন নেককার ও পবিত্র সেহেতু তাদের প্রেরনা ও দোয়া থাকাও জরুরী, যে সমস্ত ফেরেস্তা মানুষের সঙ্গে অবস্থান করে থাকে তারা যদি সেই মানুষটির নেক আমল পতাক্ষ করে মহান রবের নিকট কল্যানের দোয়া করে তাহলে সেই দোয়া কবুল হবে ইহাই স্বাভাবিক নয় কি, হাদিস থেকে ইহাই ইংগিত পাওয়া যায় যে, ফেরেস্তাগন নেককার লোকদের জন্য দোয়া করে আর ফেরেস্তাদের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। একজন মানুষ যদি প্রতিনিয়ত ফেরেস্তাদের দোয়া পায় তাহলে তার কল্যানময় প্রভাব অবশ্যই তার জীবনে প্রতিফলিত হবে সন্দেহ নেই। ফেরেস্তাদের প্রতি বিশ্বাসের পঞ্চম তাৎপর্য হল যেহেতু মুত্তাকী কিংবা ভাল লোকগন দুনিয়াতে বেশি ফেতনা বা বিপদের সম্মুখিন হয় সেহেতু ফেরেস্তাদের সাহায্য প্রয়োজন রয়েছে, যখনই কোন মুত্তাকী বান্দা কোন অপ্রিতিকর ঘটনা বা বিপদের সম্মুখিন হয় তখন ফেরেস্তারা অদৃশ্য ইংগিতে সান্তনা দিতে থাকে এবং মহান রবের নিকট তার বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করতে থাকে এবং এই বলেও দোয়া করতে থাকে যে, আপনি অনুমতি দিলে আমরা আপনার এই প্রিয় বান্দাকে সাহায্য করতে চাই। অনেকে হয়ত এগুলোকে অলিক ধারনা মনে করতে পারে। সন্দেহ দূর করার জন্য বলতে চাই বদরের যুদ্ধে যখন সাহাবায়ে কেরাম বিপদগ্রস্থ ছিল তখন ফেরেস্তাগন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিল হে প্রভু আপনি অনুমতি দিন আমরা কাফেরদের শেষ করে দেই তখন আল্লাহতায়ালা অনুমতি দিলেন আর ফেরেস্তারা এসে কাফেরদের হত্যা করতে থাকে অতপর বদরের যুদ্ধে মুসলমানেরা জয়ী হয়। তায়েফে যখন মাস্তানরা নবীজীকে পাথর মারছিল তখন ফেরেস্তাগন এসে বলতে লাগল হে নবী মোহাম্মদ, অনুমতি দিন তায়েফ নগরী উলটে দেই, আপনার শরির থেকে পবিত্র রক্ত ঝরছে এই দৃশ্য আমরা সইতে পারছিনা। নবীজী রাজি হলে না, রহমতের নবী ফেরেস্তাদেরকে বললেন তারা আমাকে চিনতে পারেনি, হতে পারে তাদের ভবিষ্যত বংশধর আমার প্রতি ইমান আনবে, মানুষগুলো যদি মরে যায় তাহলে কার কাছে ইমানের দাওয়াত পেশ করব। আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি ! শিশু ইসমাঈল যখন পানির পিপাসায় কাতর তখন ফেরেস্তা নেমে এসে ঈসমাঈলের পায়ের সামনে পানির ঝরণা বইয়ে দিয়েছিলেন। নবী ইবরাহিম যখন বাদশাহ নমরুদের আগুনে পরে যাচ্ছিলেন তখন ফেরেস্তা এসে বলল অনুমতি দিলে সাহায্য করতে পারি ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও মহাকালের ইতিহাসে আরও অসংখ্য ঘটনাবলী রয়েছে সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্ধারা এটাই প্রমানিত হল যে, ফেরেস্তাগন মুত্তাকীদের সাহায্য করে থাকে। আশা করি উপরোক্ত আলোচনা থেকে ফেরেস্তাগনের প্রতি বিশ্বাসের গুরত্ব ও তাৎপর্য অত্যান্ত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এই অধ্যায়ে ফেরেস্তাদের প্রতি বিশ্বাস এবং এর তাৎপর্য এক সঙ্গে এই জন্য আলোচনা করা হয়েছে যেন মানুষ ফেরেস্তাদের প্রতি বিশ্বাসের গুরত্ব উপলদ্ধি করতে পারে। এই আলোচনাগুলো হয়ত প্রত্যেকের কাছেই সম্পূর্ন নূতন মনে হবে, মুলত আমার অন্তরজগতে যাহা উদয় হয়েছে আমি এখানে তাহাই বর্ননা করেছি। আলোচনা বেশি দির্ঘায়িত করা সমীচীন নয় বিধায় এখানেই এই বিষয়টির ইতি টানছি।
তাকদির: ইসলামের মৌলিক আক্কিদা বিশ্বাসের মধ্যে ষষ্ট গুরত্বপূর্ন বিষয়বস্তুর নাম হল তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস। এর ষার কথা হল মানুষের জীবনে ভাল মন্দ যাহাই ঘটে সবই মহান আল্লাহর সম্মতিক্রমে সংঘটিত হয়। তাকদিরকে যদি ইসলামের মৌলিক আক্কিদা বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত না করা হত তাহলে দুনিয়ার মানুষগুলো হত নরকের অনুগামী। প্রত্যেকটি মানুষ যখন কোন কঠিন রোগে বা কোন বিপদের সম্মুখিন হয় তখন সেই মানুষটি এই বিশ্বাসের কারনেই ধৈর্য ধারণ করে যে, আমার রব ইহাই আমার জন্য নির্ধারিত রেখেছিলেন। যেহেতু আমার রব আমার ভাগ্যলিপিতে ইহাই লিপিবদ্ধ করেছেন সেহেতু এখানে আমার ধৈর্য ধারণ করাই সমীচীন হবে। একজন মানুষ যখন ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন সে মানুষটি ধৈর্য ধারণ করে তাকদির বিশ্বাসের কারনে। একজন মানুষের যখন অকাল মৃতু্য হয় তখন তার পরিবার ধৈর্য ধারন করে তাকদির বিশ্বাসের কারনেই। এভাবে মানব জীবনের প্রত্যেকটি নৈতিবাচক অপ্রত্যাসিত ঘটনাবলী দ্ধারা মানুষ যখন আক্রান্ত হয় তখন মানুষের চিন্তা চেতনা মহান স্রষ্টার দিকে ফিরে যায় যার ফলে সে প্রকৃতির সঙ্গে বিদ্রোহ করা থেকে বিরত থাকে। ডাক্টারের তত্বাবধানে যখন কোন ভাল রুগী মৃতু্যর মুখে পতিত হয় এমতাবস্তার যদি মানব মন্ডলির জন্য তাকদির বিশ্বাসের বিধান না থাকত তাহলে নিশ্চিতভাবেই মানুষ সেই ডাক্টারকে লাঞ্চিত করত। মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে হায়াত আর অবশিষ্ট ছিলনা এই বিশ্বাসই তখন ডাক্টারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা থেকে বিরত রাখে এভাবে তাকদির বিশ্বাসের পক্ষে হাজার যুক্তি বা দৃষ্টান্ত পেশ করা সম্ভব সুতরাং চিন্তাশীল সমপ্রদায়ের জন্য অল্প কথাই যথেষ্ট। বস্তুত তাকদির বিশ্বাস দ্ধারাই মানুষ সবচেয়ে বেশি ধের্যশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকে আর মানব সমাজে চলতে গিয়ে সর্বদা মানবিক মুল্যেবোধ ও নৈতিক চেতণা জাগ্রত রাখার জন্য এবং সেই সঙ্গে চরিত্রকে নির্মল করতে ধৈর্য নামক এই মহান গুনাবলীর বিকল্প নেই।
মউত এবং পরবর্তি জীবন: ইসলামের মৌলিক আক্কিদা বিশ্বাসের মধ্যে সপ্তম গুরত্বপূর্ন বিষয়বস্তুর নাম হল মৃতু্য এবং পরবর্তি জীবনের প্রতি বিশ্বাস। একজন মানুষ যদি অন্তরজগতে এই বিশ্বাস রাখে যে, মরনকামড় যে কোন সময় তার জন্য অবধারিত এবং সেই সঙ্গে যদি ইহাও বিশ্বাস করে যে তার সামগ্রিক জীবনের কর্মনীতি নিয়ে বিশ্বস্রষ্টার নিকট যে কোন সময় উপস্থিত হতে হবে তাহলে কোন একটি মানুষের পক্ষেও একটি সামান্যতম অপরাধ সংঘটিত হওয়া সম্ভব নয়। মানুষের অন্তরজগতে যখন প্রতিনিয়ত মউত এবং তার পরবর্তি অবস্থার চিন্তা জাগ্রত থাকবে ঠিক তখনই মানুষের জীবন চলার পথে তার প্রতিটি কাজ করার প্রারম্ভে তাদের অনূভুতির জগতে মহান স্রষ্টার নিকট জবাবদীহিতার অনুভুতি জাগ্রত হবে। জবাবদীহিতার অনুভূতি এমন একটি ইতিবাচক চেতণা যে চেতণা যুগে যুগে মানুষের চরিত্রকে করেছে পরিশুদ্ধ এবং নৈতিক দৃষ্টিকে করেছে প্রসারিত। অন্তরজগতে একমাত্র জবাবদীহিতার অনুভূতির উপস্থিতিই পারে মানুষকে সকল প্রকার পাপকর্ম থেকে ফিরাতে ইহা ব্যতিত দ্বিতীয় আর কোন ঔষধ আছে কিনা আমার জানা নেই। এক্ষেত্রে একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় হল শুধু প্রত্যেকটি কাজের ক্ষেত্রে জবাবদীহিতার অনুভূতি থাকলেই যে চলবে তা নয় বরং সেই কাজটি যদি কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী না হয় তাহলে সেই কাজটি একটি অনর্থক কাজে পরিনত হবে। প্রভাতে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে রাতে নিদ্রা যাওয়া পর্যন্ত মুমিনের প্রত্যেকটি কাজে কুরআন সুন্নাহের দিকনির্দেশনা রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এই দিক নির্দেশনা ব্যতিরেকে কেহ যদি অন্তাজ অনুমানের ভিত্তিতে জীবন পরিচালনা করে তাহলে তার এই কর্মনীতি দ্ধারা ইহাই প্রমানিত হয় মরন যে কোন সময় তার দুয়ারে এসে উপস্থিত হতে পারে এই বিষয়টি হৃদয় থেকে সে বিশ্বাস করছে না। আর বিশ্বাসের এই ঘাটতি থেকেই গোনাহের সুচনা হয়। সম্ভবত মরন এখনো বহুদূর এই একটি মাত্র নৈতিবাচক বিশ্বাসের কারনেই দুনিয়ার মানুষ পাপকর্মে লিপ্ত হয়। তাদের অন্তরজগতে সর্বদা এই অনুভূতি জাগ্রত থাকে যে, যেহেতু আমি জোয়ান এবং আমি অনেকটাই সুস্থ লোক তাই মৃতু্য আসার সম্ভাবনা এখন খুবই কম। বস্তুত ইহা শয়তানের একটি ভয়ংকর কুমন্ত্রনা ব্যতিত আর কিছুই নয়। এই নির্বোধ লোকেরা ভাবে জীবনের শেষ প্রান্তে তওবা করে মুমিন বান্দা হয়ে যাবে। একটি কথা ভালভাবে স্বরণ রাখা প্রয়োজন যে, যারা দির্ঘ জীবনের জন্য পাপ কর্মে লিপ্ত থাকার মত ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নেয় হেদায়েতের আলো দ্ধারা তাদের জীবন ধন্য করা আল্লাহ তায়ালা নীতি নয়। এই সমস্ত নির্বোধ লোকদের লক্ষ্য করে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে ''(পাপাচারের কারনে) তাদের হৃদয়ে কানে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে এবং (যেন হেদায়েতের আলো দেখতে না পায় সেজন্য) তাদের চোখ এক অদৃশ্য পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে আর তাদের জন্য প্রস্তত রাখা হয়েছে অত্যান্ত ভয়ংকর শাস্তী'' আল কুরআন। এই আয়াতের দিকে যদি কেহ অন্তরদৃষ্টি নিয়ে তাকায় তাহলে সে অনুধাবন করতে পারবে হেদায়েত শুধুমাত্র মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার উপর নির্ভর করছে না। একমাত্র খোদার দয়া এবং করুনার দৃষ্টি যাদের উপর থাকবে কেবলমাত্র তারাই এই হেদায়েতের সন্ধান পাবে। কর্মদোষের কারনে যদি বিধাতা মানুষের আত্বার উপর সীল বা মোহর মেরে দেয় তাহলে সেই মানুষটি হবে অনন্তকালের জন্য নরকের অধিবাসী যদিও তার কিছু সৎকর্ম বা নেক আমল থাকে। বস্তুত হেদায়েতের জন্য হৃদয় দুয়ার রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার মত বিরাট ক্ষতি মানুষের জন্য আর নেই। উপরোক্ত আলোচনায় মউত এবং পরবর্তি জীবনের উপর বিশ্বাসের গুরত্ব তুলে ধরা হল। উপকৃত হয়ে থাকলে আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে। ইসলামের সাতটি মৌলিক বিশ্বাসের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানেই শেষ হল । এ্যডমিন।

কোন মন্তব্য নেই: